জুবিন গার্গের ৩৮ হাজার গান, কপিরাইটের মালিক কে?

ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের আসাম রাজ্যে বিশাল কলিতার সংগৃহীত বিপুলসংখ্যক গান ক্যাসেট তার গুয়াহাটির বাড়িটিকে পরিণত করেছে এক অনন্য ব্যক্তিগত জাদুঘরে। এই সংগ্রহ একদিকে এনালগ সঙ্গীতের সোনালি যুগকে স্মরণ করায়, অন্যদিকে প্রয়াত আসামি সংগীতশিল্পী জুবিন গার্গকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

মাত্র ৩০ বছর বয়সী কলিতা গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের নানা প্রান্তে ঘুরে পুরোনো ও অবলুপ্ত ক্যাসেট সংগ্রহ করেছেন। সেগুলো তিনি যত্নসহকারে সংরক্ষণ করেছেন নিজের বাড়িতে। গত মাসে তিনি প্রথমবারের মতো এই সংগ্রহ সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেন। সেখানে রয়েছে হাজারো ক্যাসেট, শত শত সিডি এবং বিশ্বের বিভিন্ন সঙ্গীতশিল্পীর বিরল পোস্টার—যা দর্শনার্থীদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় অতীতের সোনালি দিনগুলোয়।

তবে এই সংগ্রহের মূল আকর্ষণ জুবিন গার্গের ডিসকোগ্রাফি। গায়ক, সুরকার ও অভিনেতা গার্গ ছিলেন আসামের সংস্কৃতির অন্যতম প্রতীক। তিনি গত মাসে সিঙ্গাপুরে মারা যান, তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত কোটি ভক্ত।

বিশাল কলিতা জানিয়েছেন, তাঁর সংগ্রহে গার্গের প্রায় ৩৮ হাজার গান রয়েছে, যেগুলোর অনেকই অন্য কোথাও আর পাওয়া যায় না। মৃত্যুর মাত্র কয়েক দিন আগে, ১৬ সেপ্টেম্বর, গার্গ নিজে কলিতার বাড়িতে গিয়ে এই সংগ্রহ দেখে আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই সংগ্রহ তাঁকে তাঁর ‘অনেক ভুলে যাওয়া সৃষ্টি’-র কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।

গায়কের মৃত্যুর পর কলিতা এখন এমন এক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, যেখানে গার্গের বন্ধুরা ও ভক্তরা একত্রে কাজ করছেন তাঁর গানগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য। তাঁদের লক্ষ্য—গার্গের গান যেন দীর্ঘদিন টিকে থাকে, এবং রয়্যালটির অর্থ পৌঁছে যায় তাঁর পরিবারের কাছে।

বিবিসিকে কলিতা বলেন, ‘এই ক্যাসেটগুলোর কিছু এত পুরনো যে, যেকোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমি চাই এগুলো আবার মানুষের স্মৃতিতে ফিরে আসুক।

তবে গার্গের গান সংরক্ষণের এই উদ্যোগে রয়েছে নানা জটিলতা। অনেক গান অনলাইনে প্রকাশ করা যাচ্ছে না, কারণ সেগুলোর কপিরাইট মালিকানা স্পষ্ট নয়। প্রযোজক, পরিবেশক ও রেকর্ড লেবেল—সব পক্ষের মধ্যে মালিকানা ছড়িয়ে আছে।

বিশ্বব্যাপী গান মালিকানা নিয়ে শিল্পীদের এই লড়াই নতুন নয়। মার্কিন পপ তারকা টেলর সুইফট নিজের গানের মালিকানা ফিরে পেতে একাধিক অ্যালবাম পুনরায় রেকর্ড করেছেন। ভারতে শিল্পীদেরও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে রয়্যালটি ও মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন রয়েছে।

গার্গের মৃত্যুর পর ভক্তরা এই জটিলতার বাস্তব রূপ দেখেছেন, যখন তাঁর জনপ্রিয় গান মায়াবিনী রাতির বুকুত হঠাৎ এক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম থেকে উধাও হয়ে যায়। গানটি কিছুদিন অনলাইনে থাকলেও লাইসেন্স–সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এক সপ্তাহের মধ্যেই সরিয়ে নেওয়া হয়।

চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গার্গের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মানস বরুয়া বলেন, ‘তার শত শত গানের কপিরাইট এখনও অনিশ্চিত বা বিতর্কিত অবস্থায় আছে।’

দিল্লিভিত্তিক মেধাস্বত্ব আইনজীবী নীল মেসন জানান, ভারতের ১৯৫৭ সালের কপিরাইট আইন অনুযায়ী গানের গীত, সুর ও রেকর্ডিং—প্রতিটির মালিকানা আলাদা। গীতিকার ও সুরকার গীত ও সুরের প্রথম মালিক, আর রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজককেই ‘লেখক’ ধরা হয়।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব অধিকার হস্তান্তর বা লাইসেন্সের জটিলতার কারণে মালিকানা নির্ধারণ ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষত যখন রেকর্ড সঠিকভাবে সংরক্ষিত থাকে না।

সবশেষে বিশাল কলিতার এই জাদুঘর এখন একদিকে গানের ইতিহাসের নিদর্শন, অন্যদিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে—ডিজিটাল যুগে কপিরাইটের ভঙ্গুর বাস্তবতা।

সূত্র: বিবিসি

 

শরিফ

Leave a Comment